বালুচরের মিষ্টি কুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি

লালমনিরহাটের তিস্তায় জেগে ওঠা ফুটন্ত বালুচর এখন কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। চরের বুকে ফলানো হচ্ছে সোনা মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, গম, ভুট্টা, ধান, মরিচ ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। চারদিকে সবুজের সমারোহ। চরের ফসলের গুণগত মান ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও দাম বেশি।

বর্ষাকালে তিস্তা ও ধরলা নদীতে খরস্রোত থাকলেও হেমন্তেই জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর। বর্ষায় নদীর দুকূল উপচে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয় ফসলি জমি ও বসতভিটাসহ নানা স্থাপনা। বর্ষার বিদায় বেলায় ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয় নদীর বেশিরভাগ অংশ। ওই দুই নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটে রয়েছে অর্ধশত চর। বন্যা আর ভাঙনের সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে জেগে ওঠা বালুচরেই ফসল বোনেন। ধু-ধু বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য। পেটে দুমুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম

করে বালুচরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের মানুষ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টি কুমড়ার কদর বেশি। এই সবজির চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি, কৃষকের আগ্রহও বেশি।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালুচরে বালু সরিয়ে গর্ত করে সেই গর্ত বাইরে থেকে আনা পলিমাটিতে পূর্ণ করা হয়। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে প্রতি গর্তে ৩-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারাগাছ বড় হলে পানি সেচ আর একটু পরিচর্যা করলে ফুল-ফল আসতে শুরু করে। বালুচরে মাচা দিতে হয় না। প্রতিটি গাছে ৮-১০টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটি কুমড়া ৩-৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বর্ষা আসার আগেই মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন চাষিরা। প্রতি কুমড়া ক্ষেতেই ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের কৃষক মছফুর আলী জানান, তার নিজের জমি নেই। সংসার চালাতে চাষাবাদের বিকল্প নেই। তাই তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরে এক হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। তার ক্ষেতে ফল আসতে শুরু করেছে। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচের এ ক্ষেত থেকে ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।

একই এলাকার কৃষক আবু মিয়া বলেন, নদীতে সব জমি ভেঙে গেছে। একটা লাউ গাছ লাগানোর মতো জমি নেই। চরের বালুময় জমিতে গর্ত খুঁড়ে ৫শ মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছি। দূর থেকে পাইপে করে পানি সেচ দিতে হয়। প্রতিটি গাছে ৭-৮টি করে কুমড়া এসেছে। আশা করছি তিন মাসের এ চাষাবাদে ২০ হাজার টাকা আসবে।

তিস্তা চরাঞ্চলের চাষি মজিবর রহমান বলেন, বালুতে কুমড়ার চারা বিচরণ করে। তাই কোনো মাচা দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভালো হয়। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের বালু মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার বিকল্প নেই। সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়। কিন্তু চরাঞ্চলের চাষিরা তা পান না। এ সুযোগ পেলে ব্যাপক হারে চাষাবাদ করা যেত পরিত্যক্ত এসব বালুচরে। যদি আগাম বন্যা না আসে তো ৪০-৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, চরের জমি চাষে, কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। বীজ দেওয়া হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সার্বিক সহায়তায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় সমৃদ্ধ হচ্ছে চরাঞ্চলের কৃষি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, আমরা সেই লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। চরের কৃষকদেরও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

facebook sharing button
twitter sharing button
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর